শিশুদের দৈনন্দিন খাবারে যথেস্ট পরিমানে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার থাকছে কিনা এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।বেশ কিছু খাবার আছে যেগুলি খুবই সহজলভ্যে এবং প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে যা বাচ্চাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষা করে থাকে।গ্রহনকৃত আয়রন সম্পূর্ণরুপে শোষণের জন্য আয়রনের সাথে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন সি আছে এমন খাবার খাওয়াতে হবে।কমলা,ব্রকলি,টমাটো,স্ট্রবেরি,আলু সহ আরও বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায়,তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারও খাওয়াতে হবে।
আয়রন ফরটিফাইড থাকে এমন ফর্মুলা মিল্ক এবং সিরিয়ালস ( Iron-fortified Formula Milk And Cereals)
যে সকল শিশুরা ফর্মুলা মিল্ক খেয়ে থাকে সবার আগে নিশ্চিত হতে হবে ঐ ফর্মুলা মিল্কে যথেস্ট পরিমানে আয়রন ফরটিফাইড আছে কিনা,তা নাহলে শিশুরা রক্তশূন্যতার স্বীকার হতে পারে।এছাড়াও বাচ্চার বয়স ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পরে যদি বাজারজাত সিরিয়াল/সেরেলাক খাওয়ানো হয় তবে তা আয়রন ফরটিফাইড সমৃদ্ধ কিনা তা দেখে নিতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের ফল(Fruits And DryFruits)
বিভিন্ন ধরনের ফল আয়রনের খুব ভাল একটি উৎস।শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে আয়রন সমৃদ্ধ ফল খাওয়াতে হবে।
খেজুর – খেজুর রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।শিশুদের সরাসরি খেজুর কিংবা খেজুর দিয়ে তৈরী বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়াতে পারেন।যেহেতু শিশুর বয়স ১ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে চিনি জাতীয় মিস্টান্ন খাবারে ব্যাবহার করা যায় না এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক মিস্টান্ন হিসেবে খেজুরের সিরাপ তৈরী করে শিশুর খাবারে ব্যাবহার করতে পারেন।ঘরে বসেই খেজুরের সিরাপ তৈরীর রেসিপি।
এছাড়াও কিছমিছ,বেদানা,তরমুজ,আপেল,এপ্রিকোট,চেরি এবং আঙ্গুর সহ বিভিন্ন ধরনের ফলে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে যা শিশুর শরিরে রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
গুড়(Jaggery)
গুর শিশুর শরিরের রক্তকে পরিশোধন করতে সাহায্য করে থাকে। শিশুর বয়স ১ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে তার বিভিন্ন খাবার যেমন – ভাত,পায়েস,সুজি এবং পিঠা সহ বিভিন্ন খাবারে ব্যাবহার করতে পারেন।
বিটরুট(Beetroots)
বিট শিশুর শরিরে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।বিটে প্রচুর পরিমানে আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকে যা দ্রুত রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দুর করে থাকে।বিভিন্ন ভাবে শিশুদের বিট খাওয়াতে পারেন – পিউরি,হালুয়া,জুস কিংবা স্যুপ।
আলু এবং মিস্টি আলু(Potato And Sweet Potato)
আলু এবং মিস্টি আলু দুটোতেই প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে তাই শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে আলু এবং মিস্টি আলু দিয়ে তৈরী খাবার খাওয়াতে পারেন যেমন – ম্যাশড পটেটো,পিউরি,হালুয়া,পিঠা,তরকারি এবং চিপস।চিজ আলুর চপ তৈরীর রেসিপি পাবেন এখানে।
ওটস(Oats/OatMeal)
ওটস বা ওটমিল আয়রনের আরও একটি ভাল উৎস।১ কাপ রান্না করা ওটসে প্রায় 3.4 mg আয়রনর থাকে।এছাড়াও ওটসে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে যা শিশুদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে ওটস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার খাওয়াতে পারেন যেমন – পরিজ,খিচুড়ি,হালুয়া,স্যুপ,বিস্কিট,কেক।3 টি পুষ্টিকর ও সহজ ওটস রেসিপি(৬মাস+ বাচ্চা)।
বিভিন্ন ধরনের বাদাম(Nuts)
চীনা বাদামে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে তাই শিশুদের সরাসরি চীনা বাদাম কিংবা পীনাট বাটার তৈরী করে খাওয়াতে পারেন।এছাড়াও কাঠ বাদাম,কাজু বাদাম এবং পেস্তা বাদামও আয়রনের খুব ভাল উৎস।পীনাট বাটার ব্যানানা স্যানডুইচ তৈরীর রেসিপি।
যেহেতু বাচ্চারা বাদামটা সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারেনা,এক্ষেত্রে কয়েক ধরনের বাদাম দিয়ে পাউডার বানিয়ে শিশুর বিভিন্ন খাবার হালুয়া,পায়েস,খিচুড়ি কিংবা দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। তবে শিশুর বয়স অবশ্যই ১০ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে বাদাম খাওয়ানো শুরু করবেন।বাদাম গুড়া তৈরীর রেসিপি।
বিনস এবং ডাল জাতীয় খাবার(Beans And Lentils )
বিভিন্ন ধরনের ডাল এবং বিনস ও আয়রনের খুব ভাল উৎস। শিম,বরবটি ,মটরশুটি,মুগ ডাল,মাশকলাই,ছোলা,রেড কিডনি বিন এবং মসুর ডালে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে। শিশুদের বাড়তি খাবার শুরু করার পর থেকে দৈনিক খাবারের তালিকায় অবশ্যই এধরনের খাবার রাখতে হবে।
পালং শাক(Spinach)
পালং শাকে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে যা শিশুদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দুর করে থাকে। শিশুর বয়স ৮ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে তার বিভিন্ন খাবারে যেমন – খিচুড়ি,স্যুপ,পিউরি কিংবা ম্যাশ করে পালং শাক খাওয়াতে পারেন।ডাল এবং পালং শাকের খিচুড়ি তৈরীর রেসিপি।
ডিম(Eggs)
শিশুদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ডিম রাখতে হবে।একটা ডিমে প্রায় 1 mg আয়রন থাকে।শিশুর ৭ মাস বয়সের পর থেকে শুধু ডিমের কুসুম এবং ১০ মাস পর থেকে পুরো ডিম খাওয়াতে পারেন।অনেক সময়ে শিশুরা সিদ্ধ ডিম খেতে চায়না,তাই বিভিন্ন ভাবে ঘুরিয়্র ফিরিয়ে খাবারে বৈচিত্র আনতে হবে।সুজি,পায়েস,খিচুড়ি কিংবা ডিম দিয়ে পুডিং তৈরী করেও শিশুদের খাওয়াতে পারেন।দেখে নিন কিভাবে তৈরী করবেন ডিমের পায়েশ বা দুধ ডিমের হালুয়া।
পোল্ট্রি এবং লাল মাংস(Poultry And Red Meat)
সব ধরনের মাংস প্রচুর পরিমানে আয়রনে ভরপুর থাকে। শিশুর বয়স ৬মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে তার দৈনন্দিন খাবারে মাংস যোগ করতে পারেন।যেহেতু শিশুরা শুরুতেই মাংস চিবিয়ে খেতে পারেনা,তাই ব্লেন্ড করে কিংবা মাংসের স্টক বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।খিচুড়ি,নুডলস কিংবা স্যুপের সাথে মাংস যোগ করতে পারেন।এছাড়াও একটু বড় বাচ্চাদের মাংস ফ্রাই,গ্রীল,নাগেটস,চপ সহ বিভিন্ন ধরনের মজাদার খাবার বানিয়ে খাওয়াতে পারেন।কলিজাতে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে তাই রক্তশূন্যতা দুর করতে খাওয়াতে পারেন কলিজা।মুরগির খিচুড়ি রেসিপি বাড়ন্ত শিশুদের জন্য।
ডার্ক চকোলেট(Dark Chocolate)
শিশুদের মাঝে মাঝে ডার্ক চকোলেট দিতে পারেন কারন এটিও আয়রনে ভরপুর একটি খাবার।চকোলেট তৈরির মূল উপাদান কোকোয়া বিন যাতে আছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে প্রাপ্ত আয়রন শোষনে সাহায্য করে থাকে।তবে চকোলেটে অতিরিক্ত চিনি থাকার কারনে পরিমিত মাত্রায় খাওয়াতে হবে।
Reference :-