শিশুর সঠিক শারীরিক এবং মানষিক বৃদ্ধির জন্য তার দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় যথেস্ট পরিমানে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা ফুসফুস থেকে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেনকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বহন করে থাকে(Iron gives hemoglobin the strength to “carry” oxygen in the blood)।শরীরে আয়রনের অভাব হলে রক্তের অন্যতম উপাদান red blood cells এর কোষ গুলি ছোট এবং ফ্যাকাসে(বর্ণহীন )হয়ে যায় যেটাকে অ্যানিমিয়া /রক্তশূন্যতা বলা হয়ে থাকে।
– আয়রন আমাদের রক্তে চিনির মাত্রাকে এনার্জিতে রুপান্তর করে থাকে।
– শিশুদের মস্তিস্কের গঠন সহ সমস্ত অঙ্গের সঠিক বিকাশ কে সাহায্য করে থাকে।
– এছাড়াও টিস্যুর পরিপূর্ণ গঠন,প্রয়োজনীয় হরমোন এবং স্নায়ুকোষ ও তার শাখাপ্রশাখার বৃদ্ধিকে তরান্বিত করে থাকে।
|
বয়স অনুযায়ী শিশুর খাবারে দৈনন্দিন নিম্নোক্ত পরিমানে আয়রন থাকতে হবে।
সাধারনত যেসকল কারনে শিশুদের রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে
- বাড়ন্ত শিশুদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় যথেস্ট পরিমানে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না থাকা।
- গর্ভকালীন সময়ে মা অতিরিক্ত রক্তশূন্যতায় ভোগা।
- জন্মগতভাবেই শিশুর রক্তে যথেস্ট পরিমানে হিমোগ্লোবিন তৈরী না হওয়া।
- প্রি ম্যাচিউর বেবি(যে সকল বাচ্চারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম নেয়) এবং যে সকল বাচ্চার জন্মের সময়ে ওজন কম থাকে।
- যে সকল শিশুরা ২ বছরের আগেই সরাসরি গরুর দুধ খেয়ে থাকে।
- যে সকল শিশুরা আয়রন ফরটিফাইড থাকে না এমন ফর্মুলা মিল্ক খেয়ে থাকে।
- শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পরেও পুস্টিকর বাড়তি খাবার না খাইয়ে শুধুমাত্র বুকের দুধ/ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো।
- দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারনে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন।
- শিশুর শরিরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম গ্রহন।
শিশুর শরিরে রক্তশূন্যতার লক্ষন
যেহেতু প্রত্যেকটা শিশুর আচরন এবং বহিঃপ্রকাশ আলাদা তারপরেও বেশ কিছু লক্ষন দেখেই বোঝা যায় শিশু রক্তশূন্যতায় ভুগছে কিনা
- শিশু ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাওয়া।
- শিশুর জিহ্বা,চোখ,নখ এবং ত্বকের রং ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
- অল্পতেই বিরক্ত এবং খিটখিটেভাব।
- হার্ট রেট বৃদ্ধি পাওয়া এবং অতিরিক্ত ঘাম।
- শক্তির অভাব বা সহজেই ক্লান্ত হয়ে পরা।
- খাবারের প্রতি অনীহা।
- ঘন ঘন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়া।
- শিশুর স্বাভাবিক ওজন এবং উচ্চতা বৃদ্ধি না পাওয়া।
- ময়লার মতো অস্বাভাবিক পদার্থ খেতে ইচ্ছা (পিকা বলা হয় – Called pica)।
শিশুর অ্যানিমিয়া /রক্তশূন্যতা নির্ণয়
আমাদের দেশে সাধারনত প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান (number of red blood cells) পরিমাপ করে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হয়েছে কিনা নির্ণয় করা হয়ে থাকে।এছাড়াও শারীরিক অবস্থা এবং রোগের মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতিতে শিশু রক্তশূন্যতায় ভুগছে কিনা নির্ণয় করে থাকে।
শিশুর রক্তশূন্যতা দুর করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
শিশুর অ্যানিমিয়া /রক্তশূন্যতা ধরা পরলে সাধারনত চিকিৎসকরা রোগের মাত্রা অনুযায়ী মুখে খাওয়ার আয়রন সাপ্লিমেন্ট(iron supplement)খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকে।তবে শুধু সাপ্লিমেন্ট খেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব না।বেশ কিছু খাবার আছে যেগুলি খুবই সহজলভ্যে এবং প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে যা বাচ্চাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষা করে থাকে।যেহেতু বাচ্চাদের পাকস্থলী ছোট একারনে বাচ্চারা খুব কম পরিমানে খেয়ে থাকে এই কারনে শিশুদের দৈনন্দিন খাবারে যথেস্ট পরিমানে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার – মাংস,ডিম,আয়রন সমৃদ্ধ ফল,মাছ,সবুজ শাক সবজি, এবং বিনস থাকছে কিনা এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
- লাল,বাদামী এবং সবুজ রংয়ের ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে।
- গ্রহনকৃত আয়রন সম্পূর্ণরুপে শোষণের জন্য আয়রনের সাথে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন সি খাওয়াতে হবে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম গ্রহন আয়রন কে সঠিক ভাবে পরিশোষণ হতে দেয়না,তাই প্রয়োজনের চেয়ে বেশী দুদ্ধজাত খাবার (Dairy Products)গ্রহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
Refference:-
https://www.ncbi.nlm.nih.gov