|
|
নিঃসন্দেহে গর্ভকালিন সময় একজন নারীর কাছে সবচেয়ে আনন্দের সময়।এসময়ে মায়ের ভিতরে আরেক টি প্রান বেড়ে ওঠে।তাই এই সময়ে পরিবারের সবাইকে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিতে হয়।যেকোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে যেন বাচ্চা এবং মা দুজনেরই জীবন রক্ষা পায়।
ব্যথাহীন বা ব্যথাসহ অতিরিক্ত রক্তস্রাব
নির্দিষ্ট সময়ের আগে যেকোন ধরনের রক্তস্রাব দেখা দিলে সাথে সাথে ব্যাবস্থা নিতে হবে।অনেক সময় গর্ভফুল নিচে থাকলে(low lying placenta) ব্লিডিং হয়ে থাকে।এরকম পরিস্থিতি দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ,ইঞ্জেকশন নিয়ে বেড রেস্টে থাকতে হবে।
অতিরিক্ত বমি
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশী কস্ট দিয়ে থাকে সেটি হল বমি।দিনে ২-৩ বার বমি করা স্বাভাবিক।তবে যদি ঘন ঘন বমি হয় তাহলে পানিশুন্য হয়ে দুর্বল হয়ে যাবার আশংকা থাকে।সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।সাধারনত ১২ – ১৪ সপ্তাহের মধ্যে বমির ভাব কমে যায়,এরপরেও যদি অস্বাভাবিক বমি হয় তাহলে সেটা অনেক সময় প্রি-এক্লেম্পশিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
তীব্র মাথাব্যথা এবং চোখে ঝাপসা দেখা
মাথাব্যথা গর্ভাবস্থায় অনেকটা স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু যদি মাথাব্যথার সাথে চোখে ঝাপসা দেখে তবে সেটি অবশ্যই বিপজ্জনক।এমতাবস্থায় সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে।
পেটে প্রচন্ড ব্যথা
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের কারনে পেটে ব্যাথা হতে পারে।অনেক সময় জরায়ুর বাহিরে যেমন-টিউব বা ডিম্বাশয়ে বাচ্চা ধারন করলে কিংবা পেটে কোন টিউমার/ফাইব্রয়েড থাকলে পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হয়ে থাকে যা মায়ের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।তাই প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হয় তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রচন্ড জ্বর
বেশির মায়েরাই গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনে ভুগে থাকে।তাই যদি কেপে কেপে প্রচন্ড জ্বর আসে এবং প্রসাবে জ্বালাপোড়া ও তলপেটে ব্যাথা হয় তবে ইউরিন ইনফেকশনের ইঙ্গিত বহন করে।এক্ষেত্রে লজ্জা না করে সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা করলে অল্প সময়ে এ জটিলতা দূর হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় খিঁচুনি অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
গর্ভাবস্থায় খিঁচুনি অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া খুবই মা এবং বাচ্চার উভয়ের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।এমনকি প্রসবের সময় বা প্রসবের পর যেকোনো সময় যদি খিঁচুনি দেখা দেয় অথবা অজ্ঞান হয়ে যায় তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙ্গা
মায়ের গর্ভাসয়ে বাচ্চা amniotic fluid নামক পানিতে ভেসে থাকে যেটা বাচ্চা ডেলিভারির সময়ে ভেংগে যায়।কিন্তু অনেক সময় ডেলিভারির সময়ের আগেই এই পানি ভাংতে থাকে যেটা বাচ্চার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।পানি ভাংগার কারনে অনেক সময় বাচ্চার প্রি-ম্যাচিউর ডেলিভারি হয়ে যায়।
হাত-পা ফুলে যাওয়া
অনেক সময় পানি আসার কারনে গর্ভাবস্থার শেষভাগে হাত পা ফুলে যায় এটা খুবই স্বাভাবিক।কিন্তু যদি হাত পায়ে জালা যন্ত্রনা হয় এবং বেশী চুলকায় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে।
হঠাৎ তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া
সাধারনত গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী পানি খাওয়া হয়ে থাকে তারপরও যদি ঘন ঘন পানির পিপাসা পায় তবে সেটা অনেক সময় পানি শুন্যতা কিংবা ডায়াবেটিকসের লক্ষন বলে ধরে নেয়া হয়।
উচ্চ রক্তচাপ
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত রক্তচাপ পরিক্ষা করা উচিত।হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে গেলে তা মা এবং বাচ্চা উভয়ের জিবনের জন্য হুমকি হতে পারে।অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ প্রি-এক্লেম্পশিয়ার লক্ষণ হয়ে থাকে তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরিক্ষা করা এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহন করা উচিত।
বাচ্চার অস্বাভাবিক নড়াচড়া
সাধারনত ১৮-২০ সপ্তাহের দিকে মা বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে পারে।গর্ভাবস্থায় যদি বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় কিংবা বাচ্চা যদি খুব বেশী নড়াচড়া করে তবে দেরী না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে।
পেটে আঘাত লাগা
যদি অসাবধানতাবশত কোন ভাবে মা পরে যায় ,পেটে আঘাত লাগে এবং বাচ্চার নড়াচড়া অস্বাভাবিক কিংবা পেটে ব্যাথা হয় তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
বিলম্বিত প্রসব
সাধারনত বাচ্চার প্রসবকালীন ব্যাথা মোটামুটি ১২ ঘন্টা পর্যন্ত হয়ে থাকে।যদি এর বেশী সময় লাগে কিংবা বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোন অংগ আগে বের হয়ে আসে তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক উন্নত চিকিৎসা নিতে হবে।