একটা সময় ছিল যখন মায়েরা তাদের বাচ্চার শরীরে ইচ্ছেমত পাউডার লাগাতো এবং পাউডার ছাড়া একটা বাচ্চার সাজুগুজু যেন অসম্পূর্ণ মনে হত।কিন্তু এখনকার দিনে অনেক বাবা মা ই বাচ্চার শরীরে বেবি ট্যালকম পাউডার ব্যাবহার করা নিরাপদ কিনা এটা নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করেছে।বেশ কিছু গবেষনায় বলা হচ্ছে যে বাচ্চার শরীরে ট্যালকম পাউডার ব্যাবহার করাটা ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু অনেকেই আছেন যারা এটা মেনে নিতে পারছেন না কারন বহু কাল ধরে বাবা মা রা তাদের বাচ্চার শরীরে পাউডার ব্যাবহার করে আসছে এবং সেসকল বাচ্চারা সুস্থও আছেন।তবে এখন সময় এসেছে শরীরে বিশেষ করে শিশুদের বেবি পাউডার ব্যাবহারের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতন হওয়ার।চলুন আজ জেনে নেই আসলেও কি শিশুদের শরীরে পাউডার ব্যাবহার করা যাবে না ? পাউডার ব্যাবহার করলে কি আদৌ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ? ।
বহু কাল আগে থেকেই শরীরে পাউডার ব্যাবহার নিয়ে বিতর্ক চলে আসছিল তবে এটা আরও বেশী জনসম্মুখে আসে যখন পৃথিবী উন্নত একটি দেশের একজন মহিলার ওভারিয়ান ক্যান্সার ধরা পরে।গবেষনায় দেখা যায় যে ঐ মহিলা তার যৌনাঙ্গে(genital area)দীর্ঘদিন ধরে পাউডার ব্যাবহার করে আসছিল।এরপর পাউডার ব্যবহারকারী আরও অনেকের উপরে জরিপ করে দেখা যায় যে যারা নিয়মিত পাউডার ব্যাবহার করে আসছে তাদের ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেক বেশী।
|
সাধারনত আমরা যে পাউডার ব্যাবহার করে থাকি তার প্রধান উপাদান হচ্ছে mineral talc particles যা একটি খনিজ পদার্থ কনা।আর এই mineral talc particles এর কারনেই পাউডার ব্যাবহার করলে আমাদের ত্বক শুস্ক থাকে,ঘাম হয় না এবং ঘামাচির মত rash শরীরে দেখা যায়না।
গবেষনায় দেখা যায় যে যে সকল মহিলা এবং শিশু তাদের যৌনাঙ্গে(genital area) পাউডার ব্যাবহার করে তাদের ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।কারন যখন যৌনাঙ্গে(genital area) পাউডার লাগানো হয় তখন এই mineral talc particles যোনিনালী(vagina) দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং ওভারিয়ান টিস্যু গুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে যা পরবর্তীতে ওভারিয়ান ক্যান্সার,সিস্ট সহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি করে থাকে।
পাউডারে অ্যাসবেসটস(asbestos) নামক একধরনের উপাদান থাকে যা মানুষ সহ যেকোন প্রানীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।গবেষনায় দেখা গেছে যে পাউডারের asbestos ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়াকে অনেক সময় ত্বরান্বিত করে থাকে।বেবি পাউডার বাচ্চাদের mucous membrane(শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি)শুকিয়ে ফেলে,এছাড়াও বাচ্চাদের শ্বসনতন্ত্রের (respiratory system ) বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন – নিউমোনিয়া,এজমা(হাঁপানি রোগ),ফুসফুসের ক্ষত সহ আরও বিভিন্ন রোগ এমনকি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নস্ট করে দিতে পারে।
সাধারনত পাউডার মুখ,গলা,বগলের নিচে এবং যৌনাঙ্গে(genital area) লাগানো হয় আর এখান থেকেই পাউডারের এসব বিষাক্ত কনা বাতাসের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে চলে যায় এবং ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্থ করে যা একসময়ে ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল এসব ক্ষতিকর উপাদান শুধু পাউডারেই নয় বরং আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহৃত বিভিন্ন পন্য যেমন – কৃত্রিম প্রসাধনী,ডিওডোরেন্ট(deodorant) এবং বিভিন্ন ধরনের supplement এ থাকে যা আমাদের শরীরে ক্যান্সারের মত রোগ তৈরী করে থাকে।
পাউডার ব্যাবহার করলে যে সাথে সাথেই ক্যান্সার হবে এমন কোন কথা নেই কিন্তু জেনে শুনে ক্ষতিকর জিনিস ব্যাবহার বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে পাউডার ব্যাবহার না করাই উত্তম।এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক বিকল্প ব্যাবহার করা উচিত যেমন – cornstarch,তেল,ময়েশ্চারাইজার।গর্ভকালিন সময়ে পাউডার সহ বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম প্রসাধনী ব্যাবহার না করাই উত্তম কারন এগুলি অনেক সময় গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করে থাকে।
এর পরেও যদি কোন বাবা মা বাচ্চাদের পাউডার লাগাতে চান তবে খুব সতর্কতার সাথে বাচ্চাকে পিছন দিকে ঘুরিয়ে ঘরের ফ্যান বন্ধ করে খুবই অল্প পরিমানে পাউডার বাচ্চার শরীরে লাগাতে পারেন তবে বাচ্চার যৌনাঙ্গে(genital area) একেবারেই না।
Reference – https://www.cancer.org