শিশুর ওজন বৃদ্ধি করবে যে খাবারগুলি | Healthy Foods for Kids to Gain Weight

By | May 11, 2019

বয়স অনুযায়ী শিশুদের ওজন ঠিক রাখার জন্য দৈনিক উচ্চ ক্যালোরি এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে যেগুলিতে ভিটামিনস,মিনারেলস এবং প্রোটিনসহ সব ধরনের খাদ্য উপাদান বিদ্যমান থাকে।শুধু ওজন বৃদ্ধি নয় শিশুদের এমন খাবার খাওয়াতে হবে যেগুলি ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে সাহায্য করবে।আজকাল বাজারে প্যাকেটজাত বিভিন্ন ধরনের বেবি ফুড,হেলথ ড্রিংকস এবং ফুড সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় যেগুলিতে Steroids,Preservatives and Artificial Flavour থাকে, শিশুদের এধরনের খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।সবার আগে মনে রাখতে হবে যে শিশুদের ওজন রাতারাতি বৃদ্ধি করা সম্ভব না তাই কম ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে শুরু থেকেই তাদের দৈনন্দিন খাবারের পুষ্টির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

বুকের দুধ

৬ মাস পর্যন্ত যেসব বাচ্চারা শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খায় তাদের বয়স অনুযায়ী সঠিক ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকে।যেসকল শিশুরা শুধুমাত্র বুকের দুধ খায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ডাইরিয়া,কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদ হজমের মত সমস্যা কম হয়।এক পাশের breast এর দুধ সম্পূর্ণ রুপে খাওয়ানোর পরে আরেক পাশের দুধ খাওয়াতে হবে।কারন প্রথমের দিকের দুধে পানির পরিমান বেশী থাকে এবং শেষের দিকের দুধে Fat সহ অন্যান্য উপাদান বিদ্যমান থাকে(Fat Rich Hindmilk) তাই বাচ্চার ওজন বৃদ্ধিতে সঠিক নিয়মে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

ফর্মুলা দুধ

পৃথিবীতে মায়ের বুকের দুধ একটা বাচ্চার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট খাবার।কিন্তু বিভিন্ন কারনে সব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ খেতে পারে না কিংবা মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হয়।সদ্যোজাত শিশুদের জন্য মায়ের বুকের দুধের পরে ফর্মুলা দুধ কে সবচেয়ে নিরাপদ খাবার হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।ফর্মুলা দুধে  DHA ARA, Proteins, Vitamin A, C, D, Iron এবং Zinc সহ আরও অনেক পুষ্টিগুন থাকে।তাই বাচ্চার শারীরিক এবং মানষিক বিকাশের পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধির জন্য সঠিক নিয়মে ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হবে।

কলা

কলাকে প্রাকৃতিক সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে।কলাতে প্রচুর পরিমানে carbohydrate,Iron,fiber,Potassium,Vitamin C এবং Vitamin B6 সহ আরও অনেক খাদ্যগুন থাকে।একটা মিডিয়াম সাইজের কলাতে প্রায় ১০০ ক্যালোরি থাকে যা বাচ্চাদের খুব দ্রুত শক্তি যোগায় ।তাই শিশুদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখুন কলা।

শিশুদের বিভিন্ন ভাবে কলা খাওয়াতে পারেন – ৬ মাস পর থেকে কলা পিউরি করে খাওয়াতে পারেন।এছাড়াও স্মুদি,মিল্কশেক,কেক,সুজি,সাবু কিংবা সিরিয়ালের সাথে কলা মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াতে পারেন।দেখে নিন কিভাবে তৈরী করবেন কলার পিউরি

দুধ

দুধ কে আদর্শ খাবার বলা হয়ে থাকে।Calcium,Protein,Vitamins এবং Minerals এ ভরপুর একটি খাবার।শিশুদের ২ বছর পূর্ণ  হবার পর সরাসরি গরুর দুধ দিতে পারবেন।তবে যদি গরুর দুধে বাচ্চার এলার্জি না থাকে তবে বাচ্চার বয়স ১ বছর পূর্ণ  হবার পর থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গরুর দুধ দিয়ে তৈরী বিভিন্ন খাবার যেমন – পায়েশ,দই,কেক,পুডিং সহ বিভিন্ন ধরনের দুদ্ধজাত খাবার বাচ্চাদের খাওয়াতে পারবেন।দেখে নিন কিভাবে বানাবেন দুধ ডিমের হালুয়া

দই

দইয়ে প্রচুর পরিমানে Good Fat এবং Calcium,Vitamins,Minerals সহ আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।শিশুর ৮ মাস বয়স পূর্ণ  হবার পর থেকে বাসাতে Full Cream দুধ দিয়ে দই তৈরী করে দিতে পারেন।

দই বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ডাইরিয়া,গ্যাস্টিকের মত সমস্যা সারাতে পথ্য হিসেবে কাজ করে থাকে।দই বাচ্চাদের সরাসরি খাওয়াতে পারেন।এছাড়াও দই ভাত,দই চিড়া,লাচ্ছি এবং বিভিন্ন ধরনের ফলের সাথে দই খাওয়াতে পারেন।

ওটস

ওটস Fiber,Iron,Zinc এবং Phosphorous  সমৃদ্ধ শস্য জাতীয় খাবার।ওটস বাচ্চারা সহজেই হজম করতে পারে এবং প্রচুর পরিমানে Fiber থাকার কারনে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে ফলে বাচ্চাদের খাবার প্রতি আগ্রহ বাড়ে এবং ওজন বৃদ্ধি করে।

৬ মাস বয়স পূর্ণ  হবার পর থেকে বিভিন্ন ভাবে ওটস বাচ্চাদের খাওয়াতে পারেন।ওটস পরিজ,খিচুড়ি,কেক এবং বিস্কুট বানিয়ে দিতে পারেন।ওটস কলার পরিজ রেসিপি এখানে পাবেন।

ডাল জাতীয় খাবার

ডাল উচ্চ ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার যা বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি করে থাকে।এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ডালে Protein,Calcium,iron,magnesium এবং Potassium থাকে।বাচ্চার বয়স ৬ মাস বয়স পূর্ণ  হবার পর শুরুতেই মুগ ডাল খাওয়াতে পারেন কারন মুগ ডাল সহজেই হজম হয়।

শিশুদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডাল রাখতে হবে।ডালের খিচুড়ি,স্যুপ এবং হালুয়া বানিয়ে খাওয়াতে পারেন।ডাল এবং পালং শাকের খিচুড়ি রেসিপি

ডিম

ডিম সব ধরনের প্রানীজ আমিষের মধ্যে সবচেয়ে সহজ লভ্য এবং পুষ্টিকর।এতে Protein,Fat,Minerals,Vitamin A,Vitamin B6 সহ আরও অনেক পুষ্টিগুন থাকে যা বাচ্চাদের সুস্থ রাখার পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধি করে।শিশুদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র কে সঠিক ভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় “Coline “এর খুব ভাল একটি উৎস হল ডিম।

শুরুতেই বাচ্চাদের পুরো ডিম না দিয়ে ডিমের কুসুম দিতে হবে এবং পরবর্তীতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পুরো ডিম খাওয়াতে পারেন।বিভিন্ন ভাবে কলা খাওয়াতে পারেন – ডিম সিদ্ধ,ডিমের ঝুরি,ডিম ভাজি,পুডিং সহ বিভিন্ন ভাবে বাচ্চাদের ডিম খাওয়াতে পারেন।

ঘি

ঘি বাচ্চাদের ওজন  বৃদ্ধি করে থাকে।বাচ্চার বয়স ৬ মাস বয়স পূর্ণ  হবার পর থেকেই তার বিভিন্ন খাবারে ঘি ব্যাবহার করতে পারবেন যেমন – ভাত,হালুয়া,খিচুড়ি।বয়স অনুযায়ী শিশুর খাবারে নিন্মোক্ত পরিমানে ঘি যোগ করতে পারেন।ঘি দিয়ে তৈরী মজাদার এবং পুস্টিকর বেসন শিরা রেসিপি

৬ মাস  —————————কয়েক ফোঁটা

৭  – ৮ মাস ———————- পৌনে ১ চা চামচ থেকে ১ চা চামচ

৯ – ১০ মাস ———————-১ চা চামচ

১ বছর —————————-১ চা চামচ থেকে দেড় চা চামচ

১ বছরের বেশী বয়সি শিশুরা ——-২ – ৩ চা চামচ

 

বাটার এবং চীজ

শিশুদের শারীরিক এবং মানষিক বৃদ্ধির জন্য Fat অত্যাবশকীয় একটি খাদ্য উপাদান।বাটার উচ্চ Fat  সমৃদ্ধ একটি খাবার যা বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি করে থাকে।চীজ Calcium,Protein,Vitamin A,Vitamin D,Vitamin B12 এবং Phosphorus এ পরিপূর্ণ  একটি খাবার।শুরুতে বাচ্চার খাবারে অল্প পরিমানে বাটার এবং চীজ যোগ করতে হবে এবং ধীরে ধীরে পরিমান বাড়াতে হবে।

শিশুদের সুজি,হালুয়া,খিচুরি,পরোটা,বিভিন্ন ধরনের Finger Food এবং স্যান্ডউইচ তৈরীতে বাটার এবং চীজ ব্যাবহার করতে পারেন।চিজ আলুর চপ রেসিপি।

বাদাম জাতীয় খাবার এবং শুকনো ফল

কাঠ বাদাম,কাজু বাদাম,চীনা বাদাম,পেস্তা বাদাম,কিছমিছ,আখরোট,ডুমুর সহ বিভিন্ন বাদাম এবং বিচিতে প্রচুর পরিমানে Omega-3 fatty acids, dietary fibers, proteins, anti-oxidants, vitamins এবং minerals থাকে যা বাচ্চাদের শারীরিক এবং মানষিক বিকাশের পাশাপাশি  ওজন বৃদ্ধি করে থাকে।

বাচ্চাদের বিভিন্ন ভাবে dry fruits খাওয়াতে পারেন।পায়েশ,হালুয়া,কেক এবং বিস্কুটের সাথে dry fruits যোগ করে দিতে পারেন।এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের dry fruits দিয়ে পাউডার বানিয়ে দুধের সাথে মিশিয়ে দুধের পুষ্টিগুন বাড়িয়ে নিতে পারেন।বিভিন্ন ধরনের বাদাম দিয়ে তৈরী Dry Fruits Powder রেসিপি

 

মাছ

মাছ শিশুর জন্য পুষ্টির চমৎকার একটি উৎস।মাছ সহজেই হজম হয় তাই শিশুর ৬ মাস বয়সের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের মাছ খাওয়াতে পারেন।মাছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড (ইএফএ), ওমেগা -3 রয়েছে যা শিশুদের মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের ( baby brain development) জন্য অত্যাবশকীয়।মাছ আমাদের heart কে সুস্থ রাখে।শিশুদের বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ খাওয়াতে পারেন তবে যেসকল মাছে mercury বেশী পরিমানে থাকে সেগুলি না খাওয়ানোই ভাল।বাচ্চাদের জন্য মাছের খিচুড়ি রেসিপি

মাংস

বাড়ন্ত শিশুদের শারীরিক ও মানষিক বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তার দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় প্রচুর পরিমানে আমিষ জাতীয় খাবার রাখতে হবে।মুরগির মাংস সহ অন্যান্য মাংসে প্রচুর প্রানীজ আমিষ থাকে যা শিশুদের আমিষের চাহিদা পুরন করে থাকে।এছাড়াও মাংসে Amino Acids,Fat,Iron,Zinc এবং Selenium সহ আরও অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে যা বাচ্চাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধি করে থাকে।

বাচ্চার বয়স ৬ মাস পূর্ণ  হবার পর থেকেই ধীরে ধীরে মাংস খাওয়াতে অভ্যস্ত করতে হবে।শুরুতে বাচ্চাদের মুরগির মাংস ব্লেন্ড করে কিংবা মুরগির স্টক দিয়ে খিচুড়ি জাতীয় খাবার কিংবা স্যুপ তৈরী করে খাওয়াতে পারেন।মুরগির খিচুড়ি রেসিপি বাড়ন্ত শিশুদের জন্য।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *