গরমকালে প্রসাবে ইনফেকশন সবচেয়ে কমন একটি সমস্যা।এসময়ে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে ঘাম যাওয়ায় অনেক শিশু এবং মহিলা বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলারা খুব সহজেই ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়ে থাকে।ইউরিন ইনফেকশন (Urinary Tract Infection – UTI) মুলত এক ধরনের Bacterial Infection যেটা মানুষের মূত্রথলি(Bladder) এবং কখনো কখনো কিডনি(Kidney)কে আক্রান্ত করে থাকে।
গবেষনায় দেখা যায় যে 5 বছরের কম বয়সী 4% মেয়ে শিশু,2% ছেলে শিশু এবং 50% এরও বেশী গর্ভবতী মহিলারা ইউরিন ইনফেকশনের স্বীকার হয়ে থাকে।
ইউরিন ইনফেকশনের কারন
বেশীরভাগ ইউরিন ইনফেকশন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকে।মানুষের মলে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এবং ত্বকের মাধ্যমে মূত্রনালী এবং মুত্রথলিতে ছড়িয়ে পরে।এসব ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালী ,মুত্রথলি এবং কিডনি(Kidney) কে সংক্রমন করে থাকে।অনেক সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য,মূত্রনালীর অস্বাভাবিকতা এবং প্রসাব করার সময়ে মূত্রথলি পুরোপুরি খালি না হলেও ইউরিন ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে।
ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষন
- প্রসাবের সময়ে ব্যাথা
- অল্প অল্প করে ঘন ঘন প্রসাব হওয়া
- তল পেটে চাপ ধরা ব্যাথা
- প্রসাবে জ্বালাপোড়া হওয়া
- গন্ধযুক্ত লালচে,হলুদ অথবা ধূসরবর্ণের প্রসাব
- প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া
- বমি,ক্ষুধামন্দা সহ খাবারের প্রতি অনীহা
- কাপুনি দিয়ে জ্বর
- অল্পতেই বিরক্তি প্রকাশ এবং মেজাজ খিটমিটে হয়ে যাওয়া
- ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ(Vaginal Discharge),পানির মত ডিসচার্জ(Watery Discharge)
- ভ্যাজাইনাল এড়িয়াতে চুলকানি(Vaginal Itching),ভ্যাজাইনাল এড়িয়াতে র্যাশ(Rash)
|
রোগ নির্ণয়
চিকিৎসকরা বেশ কিছু পদ্ধতিতে ইউরিনে ইনফেকশন হয়েছে কিনা পরিক্ষা করে থাকে।তার মধ্যে প্রসাব পরিক্ষা(Urine Test – Cultured)সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।এছাড়াও আমাদের দেশে নিন্মোক্ত উপায়ে ইনফেকশন হয়েছে কিনা তা নির্ণয় করা হয়ে থাকে
- আল্ট্রাসাউন্ড (Ultrasound Test)
- রক্ত পরিক্ষা(Blood Test)
|
ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে যে বিষয়গুলি মেনে চলা উচিৎ
- শিশুর জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর চেস্টা করতে হবে।এর ফলে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
- শিশুদের যথেস্ট পরিমানে পানি পান করার এবং প্রসাব চেপে না রেখে নিয়মিত প্রসাব করার অভ্যাস করতে হবে। প্রসাব চেপে রাখলে মূত্রনালি খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে।
- মেয়ে শিশুদের মলত্যাগের পরে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে ধৌত করার অভ্যাস করাতে হবে।কারন পিছন থেকে সামনে ধৌত করলে ব্যাকটেরিয়া সহজেই মূত্রনালিতে ঢুকে যেতে পারে।
- সিন্থেটিক(Synthetic Fabric)কাপড়ের তৈরী পোশাক বিশেষ করে অন্তর্বাস পরিহার করতে হবে।কারন এগুলি ঘাম শোষন করতে পারেনা,ফলে ঘামে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পরে।অন্তত গরম কালে সুতি কাপড়ের তৈরী পোশাক ব্যাবহার করতে হবে।
- খুব বেশি টাইট পোশাক না পরে ঢিলেঢালা পোশাক ব্যাবহার করতে হবে।
- গোসল করার সময়ে যৌনাঙ্গের এলাকা (Genital Area) শুধুমাত্র পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে।যেকোন ধরনের সাবান অথবা বডি ওয়াশ ব্যাবহার করা উচিত নয়।
- শিশুদের গোসল করার শেষে প্রসাব করার অভ্যাস করুন,এতে করে ইউরিন ইনফেকশনের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
- সন্তানরা দীর্ঘ সময়ের জন্য বাসার বাহিরে থাকলে প্রতি ৩-৪ ঘন্টা অন্তর অবশ্যই প্রসাব করার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।এই নিয়ম বড়দেরও মেনে চলা উচিত।
- ঘন ঘন বাবল বাথ নিলে ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় তাই এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ।এছাড়াও সুইমিং পুল ব্যাবহারের সময়ে খেয়াল রাখতে হবে Proper Hygiene Maintain হচ্ছে কিনা।
- নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে শিশুদের নিয়মিত ক্রিমির ঔষধ খাওয়াতে হবে,কারন ক্রিমির জন্যও অনেক সময়ে ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে।
- শিশুরা যাতে কোষ্ঠকাঠিন্যে তে না ভুগে এজন্য তার দৈনন্দিন খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
|
ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার
শিশুরা ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে লক্ষন দেখা মাত্র দেরি না করে যতটা সম্ভব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।ইউরিন ইনফেকশন বেশীর ভাগই সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ভাল হয়ে যায়,আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।তবে বেশ কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা আছে যেগুলি মেনে চললে ইউরিন ইনফেকশনের সময়ে অনেকটাই আরাম মিলবে।
- ইউরিন ইনফেকশনের সবচেয়ে বড় পথ্য হল পানি।এসময়ে শিশুদের প্রচুর পরিমানে পানি এবং পানি জাতীয় অন্যান্য তরল খাবার খাওয়াতে হবে।এতে করে খারাপ ব্যাকটেরিয়া প্রসাবের সাথে বের হয়ে যাবে।
- ইউরিন ইনফেকশন হলে শিশুদের দই খাওয়াতে পারেন।দই এ প্রচুর পরিমানে ভাল ব্যাকটেরিয়া থাকে যা দ্রুত ইউরিন ইনফেকশন সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।
- এছাড়াও আনারস এবং আঙুর (Cranberry,Blueberry) জাতীয় ফলের রস এবং ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়াতে পারেন এগুলিও দ্রুত ইউরিন ইনফেকশন সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।
- এসময়ে শিশুদের ঠান্ডা পরিবেশে রাখার চেস্টা করতে হবে যাতে করে ঘেমে না যায়,কারন যত ঘামবে ব্যাকটেরিয়া তত বেশী ছড়াবে।
|
সর্বোপরি প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক(antibiotics) খাওয়াতে হবে।এক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে।
Refference :- https://www.webmd.com