অনেক সময়ে শিশুদের মুখে এবং জিহ্বায় এক ধরনের সাদা ঘা দেখা যায় যেটাকে ওরাল থ্রাশ বা প্রচলিত ভাষায় দুধ ঘা বলা হয়ে থাকে।এই ঘা মুলত এক ধরনের ছত্রাকের অস্বাভাবিক বিস্তার যা নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করাও এর স্বীকার হয়ে থাকে।তবে ১ বছরের কম বয়সী শিশুরা এটাতে ঘন আক্রান্ত হয়।
|
ওরাল থ্রাশের কারন
আমাদের শরীরে ক্যান্ডিডা এলবিকান্স(Candida Albicans) নামক এক ধরনের ছত্রাক পরিমিত মাত্রায়(Balanced) অবস্থান করে।শিশুদের ওরাল থ্রাশ এই ছত্রাকের অস্বাভাবিক বংশ বিস্তারের কারনেই হয়ে থাকে।
- যেকোন রোগ বা অন্য কোন কারনে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এই ছত্রাক আক্রমন করে এবং ইনফেকশন ছড়ায়।
- বেশ কিছু এন্টিবায়োটিক ঔষধ আছে যেগুলি শিশুদের চিকিৎসায় ব্যাবহার করলে শরীরে বিদ্যমান সাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া কমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শিশু ওরাল থ্রাশে আক্রান্ত হয়।
- স্তন্যদানকারী মা যদি এই ধরনের এন্টিবায়োটিক গ্রহন করে তবে বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চার শরীরকে প্রভাবিত করে এবং সংক্রামন ছড়ায়।
- অনেক সময়ে শিশুরা ছত্রাক আক্রান্ত নখ কিংবা মায়ের স্তনের নিপিল চুষে খায় তবে সেই সময়ে ছত্রাক শিশুর মুখে ছড়িয়ে পরে এবং সংক্রামিত করে।
- স্বাভাবিক প্রসবে (Vaginal Delivery) অনেক সময়ে নবজাতক শিশুরা মায়ের ভ্যাজাইনাতে অবস্থিত এই ছত্রাক দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকে।
ওরাল থ্রাশের লক্ষন
- শিশুর মুখের ভিতরে,জিহ্বায় ও ঠোটের আশে পাশে ছোট ছোট সাদা ফুসকুড়ি,ফুসকুড়ির চারপাশ লাল হয়ে ঘা ছড়িয়ে যায়।
- শিশুর জিহ্বা দেখলে মনে হয় দুধ জমে বসে গেছে।
- বুকের দুধ খায় এমন শিশুরা দুধ টানার সময়ে কান্না করে ওঠে এবং অনেক সময় দুধ মুখে নেয়া বন্ধ করে দেয়।
- বাড়তি খাবার খাওয়া শিশুরা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়।
- সংক্রামন অনেক সময়ে গলা অবধি ছড়িয়ে পরে ফলে কোন কিছু গিলতে গেলে ব্যাথা অনুভুত হয়।
- ঠোটের কোনা ফেটে যায় এবং ঠিকমত হা করতে পারেনা।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা জ্বর থাকতে পারে।
- স্তন্যদানকারী মায়ের নিপিল শিশুর মুখের ছত্রাক দ্বারা সংক্রামিত হলে ব্রেস্ট ফিডিং করানোর সময়ে ব্যাথা অনুভব করা,মায়ের নিপিল ফেটে(Crack) যাওয়া।
শিশুর মুখে ওরাল থ্রাশ হলে করনীয়
- স্তন্যদানকারী মা এবং শিশু দুজনেই ওরাল থ্রাশে আক্রান্ত হলে একই সঙ্গে উভয়কেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
- আক্রান্ত স্থান কুসুম গরম পানিতে ভেজানো নরম সুতি কাপড় দিয়ে হালকাভাবে ঘষে পরিস্কার করে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিস্টাটিন কিংবা মাইকোনাজল টাইপের ঔষধ /জেল ব্যাবহার করতে হবে।
শিশুর ওরাল থ্রাশ প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
- শিশুর মুখের ভিতর,দাঁত এবং মাড়ি দিনে অন্তত দুবার পরিস্কার করে দিতে হবে।ছোট বাচ্চাদের ভেজা নরম সুতি কাপড় দিয়ে পরিস্কার করে দিতে হবে।
- শিশুর নখ কেটে ছোট রাখতে হবে।
- ব্যবহৃত চুষনী(Soother & Teether) এবং অন্যান্য খেলনা যেগুলি শিশু মুখে দিয়ে থাকে, প্রতিদিন সেগুলি সঠিক উপায়ে জীবানু মুক্ত করে নিতে হবে।
- শিশুর জন্য একাধিক নিপিল এবং চুষনী ব্যাবহার করতে পারেন।
- ব্রেস্ট পাম্প ব্যাবহার করলে তা সবসময় পরিস্কার এবং জীবানু মুক্ত রাখতে হবে।
- শিশুর ডায়াপার এড়িয়া সব সময় শুস্ক এবং র্যাশ মুক্ত রাখতে হবে।
- শিশুর ডায়াপার বদলানর পরে হাত ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।