|
নতুন মা হওয়ার অনুভুতি সব সময় একটু অন্যরকম।তাই হয়তো বলা হয়ে থাকে যে একটা শিশু জন্মের সাথে সাথে একটা মায়েরও জন্ম হয়।মা হওয়া টা যেমন আনন্দের ঠিক তেমনি অনেক কস্টের পথ পাড়ি দিতে হয়।প্রথম প্রথম কিছুটা কস্ট হলেও পরিবারের সবাই যদি নতুন মা কে এই ব্যাপারে ভরষা দেয়,সাহায্য সহযোগিতা করে তবে মায়ের পক্ষে নতুন বাবুর যত্ন নেয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।নবজাতক বাচ্চার যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচুর সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।এখানে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে যেটা অনুসরন করলে নব্জাতকের যত্নের বিষয়টা নতুন মায়ের কাছে পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে
শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।অনেকেই বাচ্চা জন্মের পর মধু,মিছরির পানি,চিনির পানি খেতে দেয় যেটা শিশুর জন্য মারাতবক ক্ষতিকর।বাচ্চার জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব মায়ের বুকের শাল দুধ খাওয়াতে হবে।এতে করে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।এছাড়াও যে সকল শিশুরা জন্মের পর ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খায় তাদের ডায়রিয়া,নিমুনিয়া,রক্ত সল্পতা সহ বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিশুখ কম হয়।এছাড়াও বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চাদের ওজন ও উচ্চতা ঠিক থাকে।
সঠিক উপায়ে বাচ্চাকে কোলে নেওয়া
অনেক নতুন মা বাবাই বুঝতে পারেনা কিভাবে সঠিক উপায়ে ছোট বাচ্চাকে কোলে নিতে হয়।নবজাতক শিশুকে সবসময় বুকের সাথে ঠেশ লাগিয়ে ধরতে হবে এবং অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে কোলে নিবে তার হাত যেন বাচ্চার মাথা,ঘাড় এবং মেরুদন্ড কে খুব ভালভাবে সাপরট দিতে পারে।বাচ্চার মাথা শরিরে থেকে একটু উচু পজিশনে থাকবে।বাচ্চার বয়স তিন মাস কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত লং টাইমের জন্য খাড়া ভাবে মেরুদন্ডের উপর ভর দিয়ে দাড়া করিয়ে রাখবেন না কিংবা জোড় করে বসানো,হাটানোর চেস্টা করবেন না,কারন এতে করে ভবিতষতে বাচ্চার মেরুদন্ড এবং পায়ের হাড়ে সমস্যা হতে পারে।
নবজাতক বাচ্চাকে কোলে নেওয়ার আগে অবশ্যই হাত পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে জীবানুমুক্ত করে নিবেন,কারন এ সময়ে বাচ্চাদের স্কিন খুব সেন্সিটিভ থাকে।অনেক সময় বড়রা বাচ্চাকে কোলে নিলে পড়নের চুড়ি,আংটি,ঘরি এসবে ব্যাথা পেয়ে থাকে,তাই এই সব বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
সঠিক উপায়ে বুকের দুধ খাওয়ানো এবং বাচ্চার ঢেকুর তোলা
নবজাতক বাচ্চারা অনেক সময়ই মায়ের বুকের নিপল পুরোপুরি ভাবে মুখে নিতে পারেনা,একারনে বুকের দুধ খাবার সময় বাহিরের বাতাস বাচ্চার পেটে চলে যায়।এতে করে পেটে গ্যাসসহ হজমের সমস্যা তৈরী হয় এবং বেশীরভাগ সময় বাচ্চা কান্না করতে থাকে।তাই এক্ষেত্রে বাচ্চার পেটের বাতাস বের করার জন্য দুধ খাবার পর ঢেকুর তোলাতে হবে।এতে করে বাচ্চার পেটের অতিরিক্ত বাতাস বেরিয়ে যাবে।বেশ কয়েক টি উপায়ে ঢেকুর তোলানো যায়-
- খাবার কিছুক্ষন পর বাচ্চাকে নিজের কাধের সাথে খাড়া করে ধরতে হবে,অবশ্যই এক হাত দিয়ে বাচ্চার মাথা,ঘাড় সাপোরট দিয়ে।এবার আরেক হাত দিয়ে বাচ্চার পিঠে,কোমড়ে আস্তে আস্তে চাপ দিতে হবে।এতে করে বাচ্চার পেটের অতিরিক্ত বাতাস ঢেকুরের সাথে বেরিয়ে যাবে।
- আরেক টি উপায় হল-বাচ্চাকে আপনার রানের উপর উপুর করে এমন ভাবে শোয়ান যাতে করে বাচ্চার পেট আপনার রানের সাথে হাল্কা ভাবে চাপ খায়।এবার বাচ্চার পিঠে,কোমড়ে আস্তে আস্তে চাপ দিন,ঢেকুর উঠে যাবে।
- এছারাও আরও অনেক ভাবেই বাচ্চার ঢেকুর উঠাতে পারেন যেমন,বাচ্চার পা দুটো ভাজ করে একসাথে বুকের কাছে নিয়ে কিছুক্ষন ধরে থাকুন।কিংবা বাচ্চার পেট ঘড়ির কাটার দিকে এবং ঘড়ির কাটার বিপরিত দিকে এভাবে আস্তে আস্তে মালিশ করলে বাচ্চার পেট থাকে বাতাস বেড়িয়ে যাবে।
নবজাতকের নাভীর যত্ন নেয়া
সাধারনত ২ সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চাদের নাভী শুকিয়ে পরে যায়।তাই এসময়ে বাচ্চার নাভীর বিশেষ যত্ন নিতে হয় যাতে করে কোন রকম ইনফেকশন না হয়।অনেক সময় নাভী দিয়ে রক্ত,পানি বের হয় এবং বাচ্চা কান্না করতে থাকে।এরকম লক্ষন দেখা দিলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামরশ নিতে হবে।
নবজাতকের গোসল
নবজাতক বাচ্চাকে সাধারনত জন্মের পর পরই পরিস্কার করার জন্য অভিজ্ঞ কেউ কিংবা হসপিটালের দক্ষ নারসরা একপ্রকার গোসল দিয়ে থাকে।এরপর অনেকেই জন্মের ৭ দিন পরে গোসল করাতে পছন্দ করে।গোসল করানোর জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ব্যাবহার করবেন।অনেক মা আছেন যারা বাচ্চার গোসলের পানিতে এন্টিসেপটিক লিকুইড(ডেটল,স্যাভলন)ব্যাবহার করে থাকে যেটা একদমই উচিত না।কারন মানুষের তবকে অনেক উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলি এন্টিসেপটিক লিকুইড দীরঘ দিন ব্যাবহারে ফলে কারযক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।এতে করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।নবজাতক বাচ্চাদের হাল্কা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করানো ভাল।আর গোসলের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন নাভীতে পানি না যায়।বাচ্চাদের গোসলের সময় যেন বাচ্চার নাকে মুখে কিংবা কানে পানি না ঢুকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
বাচ্চাকে মালিশ করা
বাচ্চাদের শরির মালিশ করে দেয়া বহু বছর ধরেই চলে আসছে এবং এর উপকারিতা অনেক।তবে খুব ধীরে ধীরে আলতো হাতে বাচ্চাদের মালিশ করবেন।মালিশের কারনে বাচ্চারা আরামবোধ করে ফলে ঘুম ভাল হয়।রক্ত চলাচল সঠিক ভাবে হয় ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।এছাড়াও বাচ্চাদের নিয়মিত পেট মালিশ করলে অতিরিক্ত বাতাস বের হয়ে যায় এবং বাচ্চা আরামবোধ করে।প্রথমে বাচ্চার পা থেকে মালিশ শুরু করতে হয়,এরপর ধীরে ধীরে পুরো শরির মালিশ করে দিবেন।সাধারনত গরমের দিনে গোসলের আগে এবং শীতের দিনে গোসলের পরে মালিশ করা উত্তম।মালিশের জন্য অলিভ অয়েল,শরিষার তেল,নারিকেল তেল কিংবা ভাল ব্র্যান্ডের লোসন ব্যাবহার করতে পারেন।তবে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখবেন যে কোন তেল বা লোসন ব্যাবহারের কারনে বাচ্চার শরিরে এলারজি,র্যাশ বা অন্য কোন ধরনের অসস্তি হচ্ছে কিনা।যদি সমস্যা হয় তবে সাথে সাথে ব্যাবহার বন্ধ করে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামরশ নিন।
নবজাতকের কান্নার দিকে লক্ষ রাখা
নবজাতক বাচ্চা কান্না করবে এটাই সাভাবিক।শিশু মায়ের গরভে এক রকম পরিবেশে থাকে আর যখন ভুমিষ্ট হয় তখন সম্পুরন নতুন এক পরিবেশে এসে পরে।ধীরে ধীরে একটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্র পরিপক্ক হতে থাকে আর এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় বাচ্চা অসস্তি বোধ করে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে কান্নার মাধ্যমে।তাই নবজাতকের কান্নার বিষয়টা সাভাবিক হলেও অনেক সময় এটা চিন্তার কারন হয়ে দাড়ায়।বাচ্চা কান্নার সময় তাদের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত।কান্না করতে থাকলে তাকে বুকের দুধ খেতে দিন,এতে যদি কান্না না থামে তবে কোলে নিয়ে আপনার কাধের উপর একটু খাড়া করে ধরে আস্তে আস্তে পিঠ মালিশ করে দিন।বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাটুন,গান গেয়ে তাকে আনন্দ দেবার চেস্টা করুন।যদি সম্ভব হয় তবে বাচ্চাকে নিয়ে বাহির থেকে বেরিয়ে আসুন।এরকম ছোট ছোট কিছু টেকনিক ব্যাবহার করে বাচ্চার কান্না থামাতে চেস্টা করুন,আর যদি মনে করেন যে বাচ্চার খুব বেশী সমস্যা হচ্ছে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামরশ্য নিবেন।