গরম কালটা ছোট বড় সবাই মোটামুটি অসস্তির মধ্যে দিয়ে দিন পার করে থাকে।বড়রা এই অসহ্য গরমে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারলেও ছোট শিশুদের বেশ নাজেহাল হতে হয়।এসময়ে শিশুরা জ্বর সর্দিকাশি,ডাইরিয়া(পেট খারাপ),পানি শুন্যতা,ঘামাচি ফুসকরিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।তবে বেশ কিছু ব্যাপারে সচেতন হলে এবং মেনে চললে এই প্রচন্ড গরমেও সোনামনিদের সুস্থ রাখা সম্ভব।
গরমে শিশুর জন্য আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন করুন
গরমকালে বাচ্চাদের আরামদায়ক ঢিলেঢোলা পোশাক পরানোর চেস্টা করবেন।এসময়ে বাচ্চাদের জন্য সুতি কাপড়ের তৈরী পোশাক সবচেয়ে আরামদায়ক।সিন্থেটিক কাপড় তাপ শোষন করে এর ফলে ত্বকে ঘামাচি এবং ফুসকুড়ি দেখা যায় তাই গরমে বাচ্চাদের সিন্থেটিক কাপড়ের তৈরী পোশাক পরানো থেকে বিরত থাকতে হবে।এছাড়াও বাসার বাহিরে গেলে বাচ্চাকে হালকা রংয়ের আরামদায়ক ফুল হাতা জামা এবং ফুলপ্যান্ট পরাতে হবে যাতে করে রোদ সরাসরি বাচ্চার ত্বকে না লাগে।
বাচ্চার ডায়াপার ঘন ঘন বদলাতে হবে
একান্ত প্রয়োজন নাহলে গরম কালে বাচ্চাকে ডায়াপার না পরানোই ভাল।চাইলে কাপড়ের তৈরি ডায়াপারও ব্যাবহার করতে পারেন।গরমকালে অতিরিক্ত ঘামের কারনে Bacterial Infection বেশি হয় তাই যতটা সম্ভব ঘন ঘন ডায়াপার বদলাতে হবে তা না হলে Diaper Rash হবার সম্ভাবনা থাকে।ডায়াপার পরানোর আগে বাচ্চার private area ভালভাবে পরিস্কার করে মুছে শুস্ক করে ডায়াপার পরাতে হবে।একবার ডায়াপার খুলে ফেলার পর আরেকবার পরানোর আগে অন্তত ৩০ মিনিট বিরতি দিতে হবে যাতে করে Diaper Area আলো বাতাসের সংস্পর্শে আসে।ডায়াপার পরানোর নিয়ম
বাচ্চা যাতে করে পানি শুন্যতায় না ভুগে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে
গরমের দিনে বাচ্চার পানি শুন্যতা হওয়া সবচেয়ে Common একটি Problem।বাচ্চা অতিরিক্ত ঘামছে কিনা এবং সে অনুযায়ী তরল খাচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।২৪ ঘন্টায় বাচ্চা কতবার প্রসাব করছে এবং কি পরিমানে প্রসাব করছে এ ব্যাপারে নজর রাখতে হবে।
- বাচ্চার বয়স ৬ মাসের কম হলে বাড়তি পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই।বাচ্চা বুকের দুধ খাচ্ছে এমন মায়েদের বেশী বেশী তরল খাবার খেতে হবে এবং অন্য সময়ের তুলনায় বাচ্চাকে ঘন ঘন বুকের দুধ কিংবা Formula Milk খাওয়াতে হবে।
- যেসব বাচ্চারা বাড়তি খাবার খাওয়া শুরু করেছে এবং বড় বাচ্চাদের পানির পাশাপাশি ডাবের পানি,তাজা ফল/তাজা ফলের জুস,মিল্ক শেক,স্মুথি খাওয়াতে পারেন এতে করে বাচ্চার পানি শুন্যতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা।বাচ্চা বুকের দুধ খেলে তার পাশাপাশি এসব তরল খাবার খাওয়াতে হবে।
- গরমে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের ফলের তৈরী কাস্টার্ড,পায়েশ,সালাদ এবং দই জাতীয় খাবার বাসাতেই তৈরী করে খাওয়াতে পারেন।এছাড়াও সবুজ শাক সবজি যেগুলিতে পানির পরিমান বেশী থাকে যেমন – লাউ,শসা,পেপে,তরমুজ খাওয়াতে পারেন
- গরমের সময়ে বাচ্চাদের খাবারের প্রতি রুচি কমে যায় তাই এসময়ে বাচ্চাদের সহজে হজম হয় এমন সব খাবার অল্প অল্প করে বারে বারে খাওয়াতে হবে যাতে করে বাচ্চার হজমে কোন সমস্যা না হয়।
রোদের তাপ বেড়ে গেলে বাচ্চাদের বাসার বাহিরে চলাচল থেকে বিরত রাখুন
রোদের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এই সময়টাতে বাচ্চাদের যতটা সম্ভব বাসার ভিতরে রাখার চেস্টা করুন।সাধারনত গরমকালে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চড়া রোদ থাকে,তাই এসময়ে সরাসরি সূর্যের সংস্পর্শে না এসে যতটা সম্ভব ঘরে অবস্থান করতে হবে।আর যদি একান্তই বাহিরে অবস্থান করতে হয় তবে –
- শিশুদের সরাসরি রোদ থেকে বাচাতে বড় ক্যাপ(sun hat ) পরাতে পারেন,এটা শিশুদের মাথা এবং ঘাড়কে সরাসরি রোদ লাগা থেকে রক্ষা করবে।
- ঘরের বাহিরে অবস্থান করলে চেস্টা করবেন ছায়াযুক্ত স্থানে দাড়াতে হবে যেমন গাছের তলায় এবং অবশ্যই ছাতা ব্যাবহার করবেন।
- ১ বছরের বেশী বয়সি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সানস্ক্রিন ব্যাবহার করতে পারেন তবে অবশ্যই আগে ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না।
- গরমকালে বাসার বাহিরে অবস্থান করলে অবশ্যই বাসায় তৈরি টাটকা খাবার ,বিশুদ্ধ খাবার পানি,ফল(কলা,পেপে,ফলের জুস) সঙ্গে করে নিয়ে নিবেন।
- এসময়ে বাচ্চাদের বাহিরে তৈরী যেকোন খাবার যেমন – আইসক্রিম,লাচ্ছি,জুস খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
বাচ্চার ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে হবে
বাচ্চারা যে রুমে থাকে সেখানকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা উচিত কারন কখনো বেশী গরম কিংবা কখনো বেশী ঠান্ডা হলে বাচ্চারা জ্বর এবং সর্দি কাশির মত সমস্যায় ভুগতে পারে।
- এয়ার কুলার কিংবা এসির বাতাস যাতে করে সরাসরি বাচ্চার গায়ে না লাগে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
- যদি বাচ্চার রুমে AC ব্যাবহার করেন তবে তাপমাত্রা একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে (24 to 26 Degree )রাখতে হবে।এতে করে বাচ্চার ঠান্ডা লাগার ভয় থাকবে না এবং বাহিরের তাপমাত্রার সাথে সহজেই মানিয়ে নিতে পারবে।
- বাচ্চাকে গোসল করানোর পরপরই সরাসরি এসির সংস্পর্শে না রাখাই ভাল।
- বাচ্চা যদি দীর্ঘক্ষন এসি রমে থাকে তবে বাহিরে বের হবার অন্তত ১০ মিনিট আগে এসি বন্ধ করে দিতে হবে এতে করে বাচ্চা বাহিরের তাপমাত্রার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে এবং ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকবে না।
বাসায় পর্যাপ্ত পরিমানে আলো বাতাস চলাচলের ব্যাবস্থা রাখতে হবে।প্রয়োজনে বাসার জানালা খোলা রাখতে হবে।
বাচ্চাকে নিয়মিত ম্যাসাজ করে গোসল করাতে হবে এতে শরিরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকবে ।এছাড়াও গরম কালে একাধিক বার বাচ্চার গা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে পারেন।